ঈমানদার ভাইবোন সবার প্রতি আসন্ন ঈদের আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি ও দুনিয়ার সব মুমিন ও সব মানবিক মানুষ ভাই বোন সব জন্য শান্তি, নিরাপত্তা ও সুপথ কামনা করছি।
দয়াময় আল্লাহতাআলা ও তাঁর পরম প্রিয়তম হাবীব প্রাণাধিক প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের প্রেম ও নৈকট্য সাধনায় বরকতময় রমজানের রোজা ও মোবারক লাইলাতুল কদরের শোকরিয়ায় ঈমানী প্রেমের ধারায় দ্বীনী দায়িত্বে মুমিনের পারষ্পরিক ঐক্য একাত্মতা মিলন ও মানবিক ভ্রাতৃত্বের চেতনায় সকল অপশক্তির খুন জুলুম সন্ত্রাস হিংস্রতা স্বৈরদস্যুতার গ্রাস থেকে মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে
ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছি আমরা সবাই।
আমরা এমন এক সময়ে ঈদ উদযাপন করছি যখন দুনিয়াব্যাপী ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাত ও মানবতা ভয়ংকর সংকটে বিপন্ন।
ফিলিস্তিন- আরাকান- ইরাক- সিরিয়া- ইয়েমেন সহ আরও অনেক দেশে নৃশংস গণহত্যা চালানো হচ্ছে। শিশু মা বোন নির্বিচারে খুন করা হচ্ছে। বাড়ি ঘর ধ্বংস করে সবাইকে এ রমজানে অবর্ণনীয় দুঃখের সাগরে নিক্ষেপ করা হয়েছে ।
পবিত্র হাদিস শরীফে বলা হয়েছে “সারা দুনিয়ার মুমিনগণ এক দেহের মত, দেহের একাংশে ব্যাথা যন্ত্রণা কষ্ট হলে সারা দেহই কষ্ট পায়”। দ্বীনের সংকটে, বাতিলের আগ্রাসনে, মিল্লাতের এ ভয়াবহ দুর্যোগ সংকটে কোন মুমিন সত্যিকার আনন্দ উদযাপন করতে যেমন পারে না তেমনি নির্বিকার দায়িত্বহীনও হতে পারে না।
এ দুরবস্থার জন্য যেমন বাতিল ফেরকা, বস্তুবাদী মতবাদ, ধর্মের নামে অধর্ম উগ্রবাদ ও মানবতার বিরুদ্ধে তাদের সৃষ্ট একক গোষ্ঠীর স্বৈরদস্যুতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং বিশ্বব্যবস্থা দায়ী, একইসাথে আমাদের নিজেদের অনৈক্য, বিচ্যুতি, ভ্রষ্টতা ও নিজেদের দায়িত্বহীনতা এবং সর্বোপরি ঈমানিয়াত ও খেলাফতে ইনসানিয়াত তথা নিজেদের স্বাধীন পূর্ণাংগ পবিত্র পথে না চলা দায়ী।
প্রাণপ্রিয় মহামহিম পবিত্র আহলে বায়েত, মহামান্য খোলাফায়ে রাশেদীন, মকবুল সাহাবায়ে কেরাম, সত্যের ইমামবৃন্দ ও মহান আওলিয়াকেরামের দেয়া নির্ভেজাল ও পূর্ণাংগ পথে চলাই মুক্তি। আধ্যাত্মিক রাজনৈতিক সবদিক থেকে ভাইবোন সবাইকে নিয়ে নিজেদের পূর্ণাংগ পথে ফিরে না এলে ধ্বংসাত্মক অবস্থা থেকে উদ্ধার ও মুক্তির পথে অভিযাত্রা অসম্ভব।
মর্মান্তিক এ দুরবস্থা বিপর্যয়ের মধ্যে নিজেদের ও সমগ্র মানবতার উদ্ধারের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কর্মসূচীতে একাত্ম হয়ে সব ভাইবোনের দুঃখ যন্ত্রনায় একাত্ম হয়ে তাঁদের সবার জন্য দোয়া ও মুক্তির পথ তৈরীর শপথে আমাদের অবশ্যই ঈদ উদযাপন করতে হবে।
ইসলামের ছদ্মবেশে বিভিন্ন বাতিল ফেরকার অনুপ্রবেশ আমাদের দ্বীন মিল্লাতের এ সংকট ও বিপর্যয়ের জন্য বিশেষভাবে দায়ী যারা আমাদেরকে ঈমান দ্বীনের প্রকৃত ধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত থেকে বিচ্যুত করে আকিদা ও আদর্শ সব দিক থেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব বাতিল ফেরকার ধোঁকা বুঝতে না পারলে আমরা নিজেদের ঈমান ও দ্বীন রক্ষা করতে পারব না।
বিভিন্ন মসজিদেও এরা ঢুকে পড়েছে যাদের এক্তেদায় নামাজ হয় না এবং যাদের বক্তব্য পবিত্র কোরআনুল করীম ও হাদিস শরীফের অপব্যাখ্যা। এমতাবস্থায় আমরা সব সুন্নী ভাইবোনকে যেখানে সুন্নী ইমাম আছেন কেবল সে সব মসজিদ ও ময়দানে নামাজ আদায়ের অনুরোধ জানাচ্ছি।
এতদসংগে আমরা ভাই ও বোন সবাইকে ঈদের নামাজে শরিক হওয়ার এবং দ্বীন-মিল্লাত মানবতার সার্বিক দায়িত্ব পালনের আহবান জানাচ্ছি যাহা মকবুল সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু আনহুমের আদর্শ ও দ্বীনের প্রকৃত ধারার নির্দেশনা এবং দ্বীনের পূর্নাংগতার রূপরেখা।
পবিত্র হাদিস শরীফের সর্বজনমান্য কিতাব মুসলিম শরীফে ২৪৪ পৃষ্ঠা ১৯২৬ নং হাদিস শরীফে ঈদের নামাজে বোনদেরকে থাকার জন্য শুধু স্বাভাবিক অবস্থায় নয় যে কোন অবস্থায় শামিল হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উক্ত মহান হাদিস শরীফে নির্দেশ হিসেবে বলা হয়েছে, মহান মা সাহাবী হজরত উম্মে আতিয়া রাদিআল্লাহু আনহা বলেছেন, “প্রাণাধিক প্রিয়নবী আল্লাহতায়ালার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম আমাদের সকল মা বোনদেরকে ঈদের জামাতে শরীক হতে আদেশ দিয়েছেন যেন যে কোন অবস্থায় ঈদ জামাতে শরীক থাকেন, প্রাকৃতিক কারণে নামাজ পড়তে না পারলেও দোয়া মোনাজাত সালাতু সালামে যেন শরীক থাকেন।” (মেশকাত শরীফ, দুই ঈদের নামাজের অধ্যায়, হাদিস শরীফ নং ১৩৪৭)
আমরা দ্বীন-মিল্লাত-মানবতার সকল দায়িত্ব ও উদযাপনে এবং ঈদের আনন্দময় জামাতে ঈমানদার ভাইবোন সবাইকে শরিয়ত সম্মত সুস্থ স্বাভাবিক পোশাক পরিচ্ছদে অংশগ্রহন করে কোরআনুল করীম ও হাদীস শরীফের নির্দেশ পালনের এবং দ্বীনের পূর্ণাঙ্গগতা বিকাশে মুক্তির অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ ও দাওয়াত জানাচ্ছি।
সবাইকে ঈদের মোবারকবাদ এবং বিপন্ন ভাইবোনদের সীমাহীন কষ্টে সমব্যাথী হয়ে উদ্ধার ও মুক্তির সাধনায় ঐক্যবদ্ধ অগ্রযাত্রায় শামিল হওয়ারও আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
পবিত্র কেবলাভুমির পুনরুদ্ধার এবং বাতিল জালিম অপশক্তির কবল থেকে মিল্লাত ও মানবতার উদ্ধার এবং মুক্তির মাধ্যমেই সকল ঈদের উৎস মহান ঈদে আজমের আলোকধারায় স্বার্থক ও পরিপূর্ণ ঈদ উদযাপন সম্ভব।
– আল্লামা ইমাম হায়াত